রবি মিয়া ধর্মপাশা সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
হাওরাঞ্চলের নদীগুলো অবিলম্বে খনন, ইজারা প্রথা বাতিল এবং সার-বীজ-কীটনাশকসহ সকল কৃষি উপকরণ নামমাত্র মূল্যে কৃষকদের সরবরাহ ও উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণের দাবিতে কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন কৃষক নেতারা। আজ শনিবার (২৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির সুনামগঞ্জ জেলা সম্মেলনে এ আহবান জানান সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। সকাল ১১ টায় জেলার ধরমপাশা উপজেলার বাদশাগঞ্জ বাজারে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের জেলা সভাপতি এডভোকেট নিরঞ্জন তালুকদারের সভাপতিত্বে জেলা সম্মেলন উদ্বোধন করেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি রত্নাংকুর দাস জহর।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষক সংগ্রাম সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হক লিকু ও ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান সাজ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের যুগ্ম সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সুনামগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ছয়ফুল আলম সদরুল, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির ময়মনসিংহ জেলার আহবায়ক বাবলি আকন্দ। এ ছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এনডিএফ'র ধরমপাশা উপজেলা কমিটির সভাপতি নূর উদ্দিন আহমেদ, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদের উপজেলা কমিটির সভাপতি কবির আহমেদ ও জাতীয় ছাত্রদলের উপজেলা আহবায়ক সুলতান উদ্দিন। অতিথিগণ তাদের বক্তব্যে বলেন, হাওড় পাড়ের মানুষ মূলত কৃষি ও মৎস্য আহরণের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে হাওড় ও জলাশয়গুলোতে পানি কম থাকায় মাছের অপ্রতুলতার পাশাপাশি ফসল হানির শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। হাওড়ে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ ও ইজারা প্রদান, উদ্ভিদ ও বন-জঙ্গল উজাড়, ভূমির ব্যবহারে পরিবর্তন, পানির উৎসস্থল ভরাট ও অনাবৃষ্টিসহ নানা কর্মকান্ড হাওড়ের প্রকৃতি ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে অকাল বন্যা, খরা, ঝড়-জলোস্কাসের কবলে পড়ছে হাওড়ের মানুষ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গ্রামে গ্রামে এনজিও ঋণের ফাঁদে পড়ে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে গ্রাম ছাড়া হচ্ছে। সার-বীজ-কীটনাশক ইত্যাদি কৃষি উপকরণের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা কৃষি উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। ফলে দারিদ্র্যতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেলাসহ হাওড় এলাকার মানুষের এই দারিদ্রতা ও দুঃখ কষ্টের জন্য দায়ী হচ্ছে মূলত। প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থা। এমপি, মন্ত্রী, এনজিও, আমলা ও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন টাউট ফড়িয়া- এরা সবাই হাওড়াঞ্চলে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। একসময় হাওড়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে এককভাবে লুটপাট করতো 'ওয়াটার লর্ড' নামে কুখ্যাত ইজারাদাররা। জেলে-কৃষকদের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের কারণে কুখ্যাত ইজারাদারদের প্রভাব প্রতিপত্তি কমলেও ইজারা প্রথা এখনও বাতিল হয়নি। বরং নতুন করে ছোটখাটো খাল-বিল, ডোবা, দাইর, গোপাট যা পূর্বে কখনও ইজারা হয়নি, এগুলোও খাস কালেকশনের নামে কৌশলে ইজারা দিয়ে গ্রামের কৃষক জনগনকে বঞ্চিত করে, অবরুদ্ধ করে, ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইজারাদারদের সাথে দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাসহ অন্যান্য লুটপাটকারী গোষ্ঠী যোগসাজশে লুটপাটের মহোৎসব চালাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ইজারা প্রথা বাতিল ও মেঘনা, সুরমা, কুশিয়ারাসহ হাওড়াঞ্চলের নদীগুলো খননসহ জেলে-কৃষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কৃষক সংগ্রাম সমিতি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম অগ্রসর করে যাচ্ছে।নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বস্ত দালাল ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার বন্দর-করিডর বিদেশি শক্তির হাতে তুলে দেয়ার মাধ্যমে দেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে দেশের শ্রমিক-কৃষক-জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম অগ্রসর করার আহবান জানান নেতৃবৃন্দ।
সম্মেলনে নিরঞ্জন তালুকদারকে সভাপতি, সাইফুল ইসলাম ছদরুলকে সাধারণ সম্পাদক এবং সামসুল আলমকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট সুনামগঞ্জ জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়।